রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৯ পূর্বাহ্ন
ক্রাইমসিন২৪ ডেস্ক: তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে ন্যূনতম মজুরি কাঠামো সমন্বয় করল সরকার। ফলে ছয় গ্রেডে মজুরি কমবেশি বেড়েছে। গতকাল রবিবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে মজুরি সমন্বয়ের এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি উপস্থিত ছিলেন। মালিক-শ্রমিক ও প্রশাসনের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ত্রিপক্ষীয় কমিটির বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এই সিদ্ধান্ত জানান। বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, স্বল্প সময়ের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করা হবে। এ মজুরি গত ১ ডিসেম্বর থেকেই কার্যকর হবে। ডিসেম্বরের অতিরিক্ত মজুরি জানুয়ারির বেতনের সঙ্গে যোগ করে ফেব্রুয়ারিতে দেওয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, প্রথম গ্রেডের একজন কর্মী সব মিলিয়ে ১৮ হাজার ২৫৭ টাকা বেতন পাবেন। ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে এই গ্রেডের মজুরি ছিল ১৩ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে নতুন মজুরি কাঠামোর গেজেটে তা ১৭ হাজার ৫১০ টাকা করা হয়েছিল। দ্বিতীয় গ্রেডের মোট বেতন ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৪১৬ টাকা। ২০১৩ সালের কাঠামোতে এই গ্রেডের বেতন ১০ হাজার ৯০০ টাকা এবং ২০১৮ সালের গেজেটে তা ১৪ হাজার ৬৩০ টাকা করা হয়েছিল। তৃতীয় গ্রেডের সর্বমোট বেতন ঠিক হয়েছে ৯ হাজার ৮৪৫ টাকা, যা ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে ছয় হাজার ৮০৫ টাকা এবং ২০১৮ সালের গেজেটে ৯ হাজার ৫৯০ টাকা করা হয়। চতুর্থ গ্রেডের সর্বমোট বেতন ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৩৪৭ টাকা। ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে এই গ্রেডের বেতন ছয় হাজার ৪২০ টাকা এবং ২০১৮ সালে ৯ হাজার ২৪৫ টাকা করা হয়। পঞ্চম গ্রেডে সর্বমোট বেতন ঠিক হয়েছে আট হাজার ৮৭৫ টাকা, যা ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে ছয় হাজার ৪২ টাকা এবং ২০১৮ সালের গেজেটে আট হাজার ৮৭৫ টাকা ছিল। ষষ্ঠ গ্রেডের সর্বমোট বেতন ধরা হয়েছে আট হাজার ৪২০ টাকা। ২০১৩ সালের কাঠামোতে তা ছিল পাঁচ হাজার ৬৭৮ এবং ২০১৮ সালে করা হয় আট হাজার ৪০৫ টাকা। সপ্তম গ্রেডের মজুরি সব মিলিয়ে আট হাজার টাকাই রাখা হয়েছে। ২০১৩ সালের কাঠামোতে সর্বনিম্ন গ্রেডের বেতন ছিল পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা।
বৈঠকে সংসদ সদস্য সালাম মুর্শেদী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আফরোজা খান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিজুল ইসলাম, বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, হামিম গ্রুপের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ, জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু, জাতীয় শ্রমিক লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক বেগম শামছুন্নাহার ভূঁইয়া, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের মহাসচিব সালাউদ্দিন স্বপন, শ্রমিক নেতা অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ, সিরাজুল ইসলাম রনি, বাবুল আক্তার, নাজমাসহ মালিক-শ্রমিক নেতারা অংশগ্রহণ করেন।
গতকাল পর্যালোচনা কমিটির বৈঠক শেষে ঘোষিত কাঠামোতে দেখা যায়, সংশোধনে সবচেয়ে বেশি বেতন বেড়েছে দ্বিতীয় গ্রেডে। ডিসেম্বরে ঘোষিত গেজেটের তুলনায় এই গ্রেডের মূল বেতন বেড়েছে ৭৮৬ টাকা। আর প্রথম গ্রেডে বেতন বেড়েছে ৭৪৭ টাকা। যে তিনটি গ্রেড নিয়ে শ্রমিকদের সবচেয়ে বেশি আপত্তি ছিল, সেই ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডে ডিসেম্বরের গেজেটের তুলনায় বেতন বেড়েছে যথাক্রমে ২০, ১০২ ও ২৫৫ টাকা। এ ছাড়া ষষ্ঠ গ্রেডে ডিসেম্বরের গেজেটের তুলনায় ১৫ টাকা বেতন বেড়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘১০ তারিখে যখন আলোচনা হয়েছিল তখন শুধু ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেড নিয়ে আলোচনা করার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু আজ আমরা মালিক-শ্রমিক উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বললাম যে ১ থেকে ৫ পর্যন্ত করব, তাহলে ৬ কেন বাদ যাবে। এ জন্য আমরা ছয়টি গ্রেড সমন্বয় করে দিয়েছি।’
বৈঠক শেষে বেতন কাঠামো সংশোধনের প্রস্তাবে মালিক ও শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিরা স্বাক্ষর করেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে এ বৈঠকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আফরোজা খানসহ মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
শ্রমিকদের পক্ষে সংশোধিত মজুরি কাঠামো মেনে নিচ্ছেন কি না জানতে চাইলে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামোতে যে সংশোধন আনা হয়েছে তা উপস্থিত সব ফেডারেশনগুলো মেনে নিয়েছে। এ জন্য সরকারকে আমরা অভিনন্দন জানাই।’ একই সঙ্গে সংশোধিত মজুরি মেনে নিয়ে শ্রমিকদের কাজে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আমিন বলেন, ‘মজুরি কাঠামোতে এর পরও কোনো অসংগতি থাকলে বিষয়টি নিয়ে আমরা শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে সমাধান করব। আর এ ব্যাপারে তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’
এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ বলেছে, আন্দোলনরত শ্রমিকরা কাজে না ফিরে গেলে আজ সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে। সংগঠনের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “সোমবার থেকে পোশাক শ্রমিকরা কাজে ফিরে না গেলে কোনো মজুরি পাবে না। একই সঙ্গে ১৩/১ ধারায় (‘নো ওয়ার্ক নো পে’) কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে।”
সাভার থেকে কালের কণ্ঠর নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকাল সপ্তম দিনের মতো কর্মবিরতি, বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা। বন্ধ ছিল অর্ধশতাধিক তৈরি পোশাক কারখানা। শিল্পাঞ্চলের অন্তত ১০টি পয়েন্টে থেমে থেমে সড়ক অবরোধের চেষ্টাকালে শ্রমিক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন।